আজ শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

টার্গেট বিএনপির ভোট

স্টাফ রিপোর্টার :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপি। আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তাই বিএনপি নেতাদের কোনো মাথা ব্যথাও নেই। তবে নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিই এখন ভোটের মাঠে ‘বড় ফ্যাক্টর’ হয়ে দাড়িয়েছে! নির্বাচনে না এলেও বিএনপির ভোটের দিকেই বিশেষ নজর রেখেছেন প্রার্থীরা। ভোটের সমীকরণ মেলাতে গোপনে বিএনপি নেতাদের কাধেই ভর করছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে সদর এবং বন্দর উপজেলার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ৮ই মে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে সোনারগাঁ উপজেলার নির্বাচন। এই তিনটি উপজেলাতেই কয়েকজন প্রার্থী বিএনপি নেতাদের সাথে গোপনে সখ্যতা গড়ে তুলতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে আলোচনায় এসেছে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ-নিজাম, সোনারগাঁ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবু ওমর, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিএনপি থেকে বহিস্কৃত আতাউর রহমান মুকুল ও একই উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ হোসেন।
জানা গেছে, মামলা জনিত কারণে সদর উপজেলায় যথা সময়ে নির্বাচন হবে কিনা- তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কেউ-ই বসে নেই। এর মধ্যে সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ-নিজাম বিএনপির একাংশের ভোট প্রত্যাশা করছেন। সূত্র বলছে, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছে শাহ-নিজাম এবং ফতুল্লার আলোচিত এক বিএনপি নেতার, যাকে ফতুল্লার মাস্টার মাইন্ড হিসেবেও চেনেন অনেকেই। সেন্টু চেয়ারম্যান বর্তমানে নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান হলেও তিনি বিএনপির তুখোর নেতা ছিলেন। সেন্টু আওয়ামী লীগে ভিরলেও তার একনিষ্ট কর্মী শহিদুল ইসলাম টিটু বর্তমানে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি পদে আছেন। এছাড়াও সেন্টু চেয়ারম্যানের আপন দুই ভাই এখনো স্থানীয় বিএনপির গুরুত্বপূর্ন পদে আছেন। ফতুল্লা থানা বিএনপির গুরুত্বপূর্ন পদে থাকা ওই আলোচিত নেতার (মাস্টার মাইন্ড) সাথেও শাহ-নিজাম ও সেন্টু চেয়ারম্যানের সাথে বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। সেন্টু এবং ওই আলোচিত বিএনপি নেতাসহ শহীদুল ইসলাম টিটু এবং তাদের অনুগত বিএনপির ওই বলয়টি ভোটের সমীকরণে শাহ-নিজামকে সাপোর্ট করে যাবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। সূত্রটি দাবি করছে, ইতিমধ্যেই ওই বলয়টি বিএনপির কর্মী সমর্থকদের বিপুল সংখ্যক ভোট শাহ-নিজামের পক্ষে আনার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, সোনারগাঁয়ের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবু ওমর উপজেলা বিএনপি নেতাদের সাথে গোপন সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি সদস্য ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন। বিএনপির ভোট বাগিয়ে নেয়ার আশায় এই আওয়ামী লীগ নেতা ইতিমধ্যেই সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির ইফতার মাহফিলে মোটা অংকের অর্থ ডোনেশন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘বাবু ওমর কালো টাকার বস্তা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। সে বিভিন্ন খাতে টাকার ছড়াছড়ি করছে। বিএনপির ভোট বাগিয়ে নিতেও গোপনে বিএনপি নেতাদের সাথে হাত মিলিয়েছে।’
যদিও এই তথ্যকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি। তবে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবু ওমরের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
এদিকে, বন্দর উপজেলায় বর্তমানে আলোচিত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে একজন মাকসুদ হোসেন। তিনি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা নির্বাচনে ভোটের সমীকরণ মেলাতে মাকসুদ ভেতরে ভেতরে বিএনপির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। সম্প্রতি মাকসুদ চেয়ারম্যানের সাথে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো. নূর উদ্দিন ও বন্দর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান বাদলকে কুশল বিনিময় করতে দেখা গেছে। এমন একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। একটি পক্ষ বলছে, মাকসুদ বিএনপির ওই দুই নেতার সাথে সখ্যতা গড়ে বিএনপির ভোটে নজর দিয়েছেন। তাছাড়া, উপজেলার আরেক হেভীওয়েট প্রার্থী ও এক সময়ের বিএনপি নেতা মুকুলের বাক্সে যেন বিএনপির ভোট না পড়ে, সেই লক্ষ্যে মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন এবং সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সাথে বিশেষ কমিটমেন্ট রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। সাখাওয়াত ও টিপুকেও দেখা গেছে, মুকুলকে ইঙ্গিত করে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করে যেতে।
এদিকে, বিএনপি থেকে বহিস্কার হলেও মুকুলের ভরসা বিএনপির ভোটেই। কেননা, তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন এবং বন্দরের বিএনপির বৃহৎ একটি অংশ মুকুলের অনুসারী। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় বিএনপির সমর্থকরা ভোট প্রদান করবে কিনা- তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও মুকুল বিএনপির ভোটে ভর করেই ভোটের অঙ্ক কষছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।
যদিও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি নীতি-নির্ধারকরা যেহেতু বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, সেহেতু এই নির্বাচনেও যদি বিএনপির কোনো নেতাকর্মী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ভোটে অংশ নেয়া কিংবা কোনো ধরনের সহযোগিতা সহ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ভাবে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমাদের দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা এসেছে যে, আমরা এই সরকারের অধিনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমরা অংশ নেইনি। উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এখন দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ যদি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে ভোটে অংশ গ্রহণ করে অথবা কোনো প্রার্থীর পক্ষে পক্ষাবলম্বনও করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সাংগঠিনক ভাবে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। সে যেই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এই সরকারের অধিনে নির্বাচনগুলোতে যেন মানুষ অংশগ্রহণ না করে এবং ভোট কেন্দ্র না যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, মানুষকে নিরুৎসাহিত করছি।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমাদের ম্যাসেজ ক্লিয়ার, বিএনপি নির্বাচনে নেই। এখন বিএনপির কোনো নেতা যদি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনি কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে আমরা বিষয়গুলো কেন্দ্রে অবগত করবো এবং কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।’